যে তড়িৎ কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ রাসায়নিক বিক্রিয়ার শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় তাকে তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বলে।
কোন তড়িৎ রাসায়নিক কোষে প্রতিটি তড়িৎদ্বার তড়িৎ বিশ্লেষ্যের সংস্পর্শে থাকে। তড়িৎদ্বার এবং তড়িৎবিশ্লেষ্য যুগলকে একসাথে অর্ধকোষ বলা হয় এবং অর্ধকোষের সংঘটিত বিক্রিয়াকে অর্ধকোষ বিক্রিয়া বলে।
যেমন- ডেনিয়েল কোষে অ্যানোড অর্ধকোষ এবং এতে সংঘটিত বিক্রিয়া নিম্নরূপ-
Zn(s)∣ZnSO4(aq)
বা, Zn(s)∣Zn2+(aq) বা, Zn(s)/Zn2+(aq) বা, Zn(s),Zn2+(aq)
অর্ধকোষ বিক্রিয়া (Half-cell reaction) : Zn(s)→Zn2+(aq)+2e−
কোনো অর্ধকোষকে যেভাবে প্রকাশ করলে অ্যানোড হয় ঠিক উল্টোভাবে প্রকাশ করলে ক্যাথোড হবে।
অর্ধকোষের শ্রেণিবিভাগ নিম্নরূপ-
এরূপ অর্ধকোষ কোনো ধাতুর সংস্পর্শে ঐ ধাতুর আয়নের দ্রবণ থাকে। এ প্রকার অর্ধকোষকে M/M2+(aq) প্রতীক দ্বারা লেখা হয়। ডেনিয়েল কোষের অর্ধকোষ দুটি এ শ্রেণির উদাহরণ:
যেমন- Zn(s)/Zn2+(aq):Cu(s)/Cu2+(aq)
এক্ষেত্রে অর্ধকোষ বিক্রিয়া হল:
M(s)⇋Mn+(aq)+ne− Zn(s)⇋Zn2+(aq)+2e−
Cu(s)⇋Cu2+(aq)+2e−
এরূপ অর্ধকোষে কোনো ধাতুকে এর কোনো অদ্রবণীয় লবণের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে ঐ অদ্রবণীয় লবণের অ্যানায়ন সম্বলিত একটি যৌগের দ্রবণ যোগ করা হয়। যেমন, Ag তারকে অদ্রবণীয় AgCl(s) এর মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে এতে HCl বা, NaCl দ্রবণ যোগ করে সৃষ্ট অর্ধকোষটি হয়: Ag(s),AgCl(s)/Cl−(aq)
এই শ্রেণির ক্যালোমেল অর্ধকোষটি হল: Hg(l),Hg2Cl2( s)/Cl−(aq)
অ্যানোডরূপে ক্যালোমেল অর্ধকোষ বিক্রিয়া : 2Hg(l)+2Cl−⇋Hg2Cl2( s)+2e−
ক্যাথোডরূপে ক্যালোমেল অর্ধকোষ বিক্রিয়া : Hg2Cl2(s)+2e−⇋2Hg(l)+2Cl−(aq)
অধিক সক্রিয় ধাতু ও পারদের (Hg) মিশ্রণ দ্বারা তৈরি ধাতু-অ্যামালগাম দণ্ডকে ঐ ধাতুর লবণের দ্রবণে ডুবিয়ে এরূপ অর্ধকোষ তৈরি করা হয়। তবে অ্যামালগাম ব্যবহার করায় ধাতুটির জারণ দ্বারা ধাতব আয়নে রূপান্তর নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন- সোডিয়াম অ্যামালগাম অর্ধকোষ Na.Hg(s)/Na+(aq)
এক্ষেত্রে অর্ধকোষ বিক্রিয়া হল: Na⋅Hg(s)⇋Na+(aq)+e−+Hg(l)
কোন অবস্থান্তর ধাতুর দুটি ভিন্ন জারণ-সংখ্যা বিশিষ্ট দুটি লবণের দ্রবণে একটি নিষ্ক্রিয় ধাতুর (Pt বা Au) তার বৈদ্যুতিক পরিবাহীরূপে ডুবিয়ে এরূপ অর্ধকোষ তৈরি করা হয়। যেমন,
অর্ধ কোষ :
Pt,Fe2+(aq)/Fe3+(aq)Au,Sn2+(aq)/Sn4+(aq)
জারণ অর্ধকোষ বিক্রিয়া :
Fe2+(aq)⇋Fe3+(aq)+e−Sn2+(aq)⇋Sn4+(aq)+2e−
এরূপ অর্ধকোষ নিষ্ক্রিয় ধাতুর (Pt) তারকে H2 বা Cl2 গ্যাসের যৌগের দ্রবণে ডুবিয়ে রেখে 25°C ও 1 atm চাপে ঐ গ্যাসটিকে এ দ্রবণে বুদবুদ আকারে চালনা করা হয়। যেমন হাইড্রোজেন অর্ধকোষ।
Pt,H2(g)(1 atm)/H+(aq)(1M)H2(g)⇋2H+(aq)+2e−
একটি কাচ বা চীনামাটির পাত্রের মাঝখানে একটি সরু ছিদ্রযুক্ত দেয়াল দিয়ে একভাগে ZnSO4 এবং অপরভাগে CuSO4 দ্রবণ নেয়া হয়। দ্রবণদ্বয়ের উচ্চতা সমান রাখা হয়। ZnSO4 দ্রবণে Zn এবং CuSO4 দ্রবণে Cu দন্ড নিমজ্জিত করে ও দুটিকে একটি তারের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়।
অ্যানোড বিক্রিয়া: Zn(s)⟶Zn2+(aq)+2e−
ক্যাথোড বিক্রিয়া: Cu2+(aq)+2e−⟶Cu(s)
Zn(s)+Cu2+(aq)→Zn2+(aq)+Cu(s)
এ কোষটিকে নিম্নরুপে প্রকাশ করা যায়-
Zn(s)/Zn2+(aq)∣Cu2+(aq)/Cu(s);E0=1.1 V বা, Zn(s)/ZnSO4(aq)∣CuSO4(aq)/Cu(s);E0=1.1 V
১। (i) নং কোষটি একটি তড়িৎ রাসায়নিক কোষ যার মধ্যে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
(ii) নং কোষ একটি তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ। যাতে বিদ্যুৎশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
২। (i) নং কোষের বাহ্যিক বর্তনীতে বিদ্যুৎ উৎসের প্রযয়োজন হয় না। কিন্তু,
(ii) নং কোষের বাহ্যিক বর্তনীতে বিদ্যুৎ উৎসের প্রযয়োজন হয়।
৩। (i) নং কোষের অ্যানোড ও ক্যাথোড যথাক্রমে ধণাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জযুক্ত।
(ii) নং কোষে তা বিপরীত চিহ্নযুক্ত হয়।
৪। (i) কোষে দুটি ভিন্ন তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি ভিন্ন তড়িৎদ্বার ব্যবহৃত হয়। কিন্তু,
(ii) নং কোষে একই তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি তড়িৎদ্বার ব্যবহৃত হয়।
৫। (i) নং কোষে জারণ বিজারণ বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। কিন্তু
(ii) নং কোষে উৎসের উপর নির্ভর করে।
৬। (i) নং কোষটি হল শক্তি উৎপাদী কোষ।
(ii) নং কোষ হল শক্তিগ্রাহী কোষ।
৭। (i) নং কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিমুক্ত ইলেকট্রন প্রবাহের ফলে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়।
(ii) নং কোষে দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থে সৃষ্ট আয়ন দ্বারা তড়িৎ প্রবাহ ঘটে।
৮। (i) নং কোষে ইলেকট্রন প্রবাহের ঠিক বিপরীত দিকে তড়িৎ প্রবাহ ঘটে।
(ii) নং কোষে দ্রবণে বা গলিত তড়িৎ বিশ্লেষ্যর মধ্যে যেদিকে অ্যানায়নের পরিবহন ঘটে সেদিকেই তড়িৎ প্রবাহিত হয়।
৯। (i) নং কোষে অ্যানোডে জারণ ও ক্যাথোডে বিজারণ ঘটে। তবে অ্যানোডের উপাদান নিজে ইলেকট্রন ত্যাগ করে জারিত হয় এবং তড়িৎ বিশ্লেষ্য থেকে ক্যাটায়ন ক্যাথোডে ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয় ও জমা পড়ে।
(ii) এ কোষেও অ্যানোডে জারণ ও ক্যাথোডে বিজারণ ঘটে তবে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ-আয়নীকরণের ফলে সৃষ্ট ঋণাত্মক আয়ন অ্যনোডে আকৃষ্ট হয়ে ইলেকট্রন ত্যাগ করে জারিত হয় এবং ধণাত্মাক আয়ন ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয়।
ডেনিয়েল Cell কে পরোক্ষ সংযোগের মাধ্যমে লবণ সেতুর মাধ্যমে তৈরি করা যায়।
Zn(s)∣∣Zn2+(aq)∥Cu2+(aq)∣∣Cu(s)
দুটি অর্ধকোষের মধ্যে পরোক্ষ সংযোগ সাধনের জন্য বিশেষ লবণ যেমন- KCI, KNO3, NH4NO3 এর সম্পৃক্ত দ্রবণ ভর্তি U আকৃতির কাচনলের উভয়মূখকে তুলা দ্বারা বন্ধ করে অর্ধকোষদ্বয়ের উভয় তরলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। অর্ধকোষদ্বয়ের এরূপ পরোক্ষ সংযোগ সাধনকে লবণ সেতু বা Salt ব্রীজ বলা হয়। লবণ সেতুতে ব্যবহৃত লবণের বৈশিষ্ট্য হল এ লবণের ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের গতিবেগ সমান বা প্রায় হতে হবে। ব্যবহৃত লবণটি কোষ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না। লবণ সেতুতে ব্যবহৃত লবণ অর্ধকোষের তড়িৎবিশেষ্যের সাথে কোনো বিক্রিয়া করবে না।
(i) এটি উভয় তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে সংযোগ সাধন করে কোষের বর্তনী পূর্ণ করে।
(ii) লবণ সেতুর অভাবে জারণ অর্ধকোষে ধণাত্মক, বিজারণ অর্ধকোষে ঋণাত্মক আয়নের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে উভয় অর্ধকোষে জারণ বিজারণ বিক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। অল্প সময়ের মধ্যে কোষ বিক্রিয়া তথা বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। জারণ অর্ধকোষে ধণাত্মক আয়ন বেড়ে গেলে লবণ সেতু থেকে ঋণাত্মক আয়নের ব্যাপন ঘটে। অনুরূপভাবে বিজারন অর্ধকোষে ঋণাত্মক আয়ন বেড়ে গেলে লবণসেতু থেকে ধণাত্মক আয়নের ব্যাপন ঘটে। ফলে উভয় তরলে বৈদ্যুতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।
(iii) তড়িৎ বিশ্লেষ্য দুটিকে সছিদ্র দেয়ালের মাধ্যমে পৃথক করা হলে, দেয়ালের গায়ে একটি তরল সংযোগ বিভব সৃষ্টি হয়। ফলে এ কোষ থেকে কিছু পরিমাণ কম বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। কিন্তু লবণ সেতু ব্যবহার করা হলে বা লবণ সেতুর মাধ্যমে কোষ তৈরি করা হলে এক্ষেত্রে তরল সংযোগ বিভব তৈরি হয় না বলেই তা থেকে অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, যখন দুটি তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ বা একই তড়িৎ বিশ্লেষ্যের দুটি ভিন্ন ঘনমাত্রার দ্রবণ পরস্পর সংস্পর্শে আসে তখন উভয়ের সংযোগস্থলে একটি বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হয়। একে তরল সংযোগ বিভব বলে। এ বিভব দ্রুতগামী আয়নের বেগ হ্রাস করে তথা বিক্রিয়ার হার কমে ।
ড্যানিয়্যাল কোষে দুটি তড়িৎবিশ্লেষ্যের দ্রবণকে অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথকীকৃত অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে থাকলে দুটি তড়িৎদ্বারের দুই প্রকোষ্ঠের আয়নসমূহ অর্ধভেদ্য পর্দার মধ্য দিয়ে অসম বেগে চলাচল করার কারণে দুই তরলের সংযোগস্থলে যে বিভব সৃষ্টি করে তাকে তরল সন্ধি বিভব (LJP) বলে। যদি ক্যাটায়ন, অ্যানায়ন অপেক্ষা দ্রুতগামী হয় তবে ক্যাটায়নটি অ্যানায়ন অপেক্ষা দ্রুত লঘু দ্রবণে পরিব্যপ্ত হয়। ফলে উক্ত দ্রবণটি ধীরে ধীরে অপেক্ষাকৃত বেশি ঘনমাত্রার দ্রবণের তুলনায় (+)ve চার্জ যুক্ত হয়ে পড়ে।
অপরদিকে অ্যানায়ন, ক্যাটায়ন অপেক্ষা দ্রুতগামী হয় তাহলে অপেক্ষাকৃত লঘু দ্রবনটি ঋণাত্মক চার্জযুক্ত হয়ে পড়ে। তাই দেখা যায় যে উভয় ক্ষেত্রেই উভয় দ্রবণের সংযোগ স্থলে একটি বৈদুতিক দ্বি-স্তর সৃষ্টি হয় এবং বিপরীত চার্জের আকর্ষণের জন্য একটি বিভব (Potential) পার্থক্য সৃষ্টি হয় যা LJP নামে পরিচিতি ।
যেহেতু LJP সৃষ্ঠির জন্য অর্ধভেদ্য পর্দার পৃষ্ঠতল বরাবর আয়নসমূহের অসম বেগে চলাচল দায়ী সেহেতু ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করে বা ভিন্ন ভিন্ন প্রকোষ্ঠের বিদ্যমান অতিরিক্ত চার্জকে সেখানেই প্রশমিত করার মাধ্যমে LJP হ্রাস করা হয় । লবণ সেতু ব্যবহার করে এ কাজটি করা হয়। যে আয়নসমূহ LJP সৃষ্টি করে লবণ সেতুতে উপস্থিত লবণ উক্ত আয়নসমূহের সাথে বিক্রিয়া করে আয়নসমূহের লবণ গঠন করে ফলে LJP প্রশমতি হয়। যেমন- Zn(s)∣ZnSO4(aq)∣∣CuSO4(aq)∣Cu(s)
LJP সৃষ্টির জন্য Zn2+ ও SO42− আয়ন দায়ী। তখন লবণ সেতুতে ব্যবহৃত লবণ (KCl) উক্ত আয়নদ্বয়ের সাথে বিক্রিয়া করে তাদের লবণ উৎপন্ন করে ফলে LJP প্রশমিত হয়।
Zn2++2Cl−→ZnCl2;SO42−+2 K+→K2SO4
তড়িৎ রাসায়নিক কোষের প্রত্যেকটি অর্ধকোষে তড়িৎ বিশ্লেষ্য এবং তড়িৎদ্বারের পৃষ্ঠতলে একটি নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক বিভব সৃষ্টি হয় তাকে ঐ তড়িৎদ্বারের একক তড়িৎদ্বার বিভব বলে ।
ব্যাখ্যা (Explanation): কোন তড়িৎদ্বার বা ধাতব দন্ডকে এর লবণের দ্রবণে নিমজ্জিত করলে ধাতব দন্ড হতে ধাতব পরমাণুগুলো আয়নাকারে দ্রবণে আসার প্রবণতা দেখায়। একে ঐ আয়নের দ্রবণ চাপ বলা হয়। আবার, দ্রবণের ধণাত্মক আয়নগুলো e– গ্রহণ করে পুনরায় ধাতব দন্ডে যুক্ত হতে চায়। একে ধাতব আয়নের অসমোটিক চাপ বলা হয়। এ দুটি বিপরীতমূখী প্রক্রিয়া কখনও সমান হয় না, এর ফলে ধাতব দন্ড এবং আয়নের সংস্পর্শ তলে একটি বৈদ্যুতিক বিভব সৃষ্টি হয়। একে তড়িৎদ্বারটির তড়িৎদ্বার বিভব বলে। যদি, দ্রবণ চাপ > অসমোটিক চাপ হয় তাহলে তড়িৎদ্বারটি অ্যানোড হিসেবে কাজ করে এবং অসমোটিক চাপ > দ্রবণ চাপ হলে তড়িৎদ্বারটি ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে।
Zn দ্রবণ চাপ⇌অসমোটিক Zn2++2e−
যে তড়িৎদ্বারে জারণ ঘটে তাকে অ্যানোড এবং অ্যানোডের বিভবকে জারণ বিভব বলে। অ্যানোড হতে দ্রবণে পরমাণুগুলো দ্রবণে আয়ন হিসেবে যাওয়ার প্রবণতার কারণে অ্যানোড ও দ্রবণের সংযোগ স্থলে যে বিভব সৃষ্টি হয়, তাকে জারণ বিভব বলে। যেমন- গ্যালভানিক কোষের অ্যানোড তড়িৎদ্বারের জারণ বিভব হল নিম্নরূপ :
Zn(s)→Zn2+(aq)+2e−;EZn/Zn2+=+0.76 V
যে তড়িৎদ্বারে বিজারণ ঘটে, তাকে ক্যাথোড এবং ক্যাথোডের বিভবকে বিজারণ বিভব বলে। দ্রবণ থেকে ধণাত্মক আয়নের ক্যাথোডে ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতার কারণে ক্যাথোড এবং দ্রবণের সংযোগস্থলে যে বিভব উৎপন্ন হয়, তাকে বিজারণ বিভব বলে। যেমন: গ্যালভানিক কোষের বিজারণ বিভবের মান :
Cu2+(aq)+2e−→Cu(s);ECu2+/Cu=+0.34 V
উল্লেখ্য যে, কোন তড়িৎদ্বারের জারণ বিভব এবং বিজারণ বিভবের মান সমান কিন্তু বিপরীত চিহ্নযুক্ত হবে। [আয়ন আগে ধাতু পরে হলে বিজারণ বিভব এবং ধাতু আগে আয়ন পরে হলে জারণ বিভব বুঝায়।]
তড়িৎ রাসায়নিক কোষের কোন অর্ধকোষের তড়িৎদ্বার যে তড়িৎ বিশ্লেষ্য বা আয়নে দ্রবণে নিমজ্জিত থাকে সে দ্রবণের ঘনমাত্রা 1M, তাপমাত্রা 25°C এবং গ্যাসীয় তড়িৎদ্বারের ক্ষেত্রে 1 atm চাপে বুদবুদ আকারে গ্যাস চালনা করা হলে প্রাপ্ত তড়িৎদ্বার বিভবকে প্রমাণ তড়িৎদ্বার বিভব বলে।
25°C তাপমাত্রায় 1M ঘনমাত্রার CuSO4 দ্রবণে Cu দন্ড নিমজ্জিত করে প্রাপ্ত অর্ধকোষকে প্রমান H2 তড়িৎদ্বারের সাথে যুক্ত করে যে কোষ পাওয়া যায় তার emf এর মান হচ্ছে +0.34V.
কোন তড়িৎদ্বারের বিভব মান পরিমাণ করতে হলে, একে অবশ্যই একটি প্রমাণ তড়িৎদ্বারের সাথে যুক্ত করে সম্পূর্ণ কোষ তৈরি করতে হয়। ঐ কোষের EMF মানই পরীক্ষাধীন তড়িৎদ্বারের বিভব মান নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রমাণ তড়িৎদ্বারটিকে নির্দেশক বা Reference তড়িৎদ্বার বলে।
যেমন- (i) H2 তড়িদ্বার, (ii) ক্যালোমেল তড়িৎদ্বার ।
উল্লেখ্য যে, প্রমাণ তড়িৎদ্বারের বিভবের মান স্বেচ্ছাকৃতভাবে শূন্য ধরা হয়। নির্দেশক তড়িৎদ্বার দু’প্রকার।
প্রমাণ হাইড্রোজেন তড়িৎদ্বারকে (Standard Hydrogen electrode S.H.E) প্রাইমারি বা মুখ্য নির্দেশক তড়িৎদ্বার বলা হয়। কারণ হাইড্রোজেন তড়িৎদ্বার (S.H.E) দ্বারা অন্যান্য তড়িৎদ্বারের প্রমাণ বিভব নির্ণয় করা হয়।
দৈনন্দিন বিভিন্ন ইলেকট্রোডের বিভব মাপার জন্য প্রাইমারি নির্দেশক তড়িৎদ্বার রূপে প্রমাণ H- তড়িৎদ্বার (S.H.E) ব্যবহার করা সুবিধাজনক নয়। কারণ এর মধ্যে (১)25°C তাপমাত্রায় সব সময় HCl দ্রবণের ঘনমাত্রা 1.0M রাখা যায় না; এবং (২) ঐ HCl দ্রবণে 1atm চাপে বিশুদ্ধ H2গ্যাস চালনা করা সম্ভব হয় না। তাই S.H.E এর পরিবর্তে S.H.E দ্বারা সঠিকভাবে নির্ধারিত তড়িৎ বিভব যুক্ত কিছু ধাতু ও ধাতুর অদ্রবণীয় লবণ তড়িৎদ্বার বা অর্ধকোষকে প্রয়োগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এরূপ তড়িৎদ্বার যুক্ত মধ্যকোষকে সেকেন্ডারি বা গৌণ নির্দেশক তড়িৎদ্বার বলে। যেমন-
1M ঘনমাত্রার H+ আয়নের দ্রবণে Pt গুড়ার আস্তরণ যুক্ত Pt পাত রেখে এর মধ্যে 25°C তাপমাত্রায় এবং 1 atm চাপে বুদবুদ আকারে বিশুদ্ধ H2 গ্যাস চালনা করা হলে সৃষ্ট তড়িৎদ্বারকে H2 তড়িৎদ্বার প্রকাশ করা হয়।
21H2(g)⇋H++e− এ তড়িৎদ্বারকে নিমরূপে প্রকাশ করা যায়।
Pt,H2( gas )(1 atm)/H+(1M);E0=0V
তড়িৎ কোষে সংযুক্ত অবস্থায় H2 তড়িৎদ্বার অ্যানোড না ক্যাথোড হবে তা নির্ভর করে কোষের অপর তড়িৎদ্বারের বিজারণ বিভবের উপর। যদি অপর তড়িৎদ্বারের বিজারণ বিভবের মান H2 তড়িৎদ্বারের চেয়ে কম হয় তাহলে H2 তড়িৎদ্বার হবে ক্যাথোড এবং এর বিপরীত হলে H2 তড়িৎদ্বার হবে অ্যানোড।
তড়িৎদ্বার অ্যানোড হলে: Pt,H2(1.0 atm)/H+(1.OM);E∘=0.0 Volt
21H2⇋H++e−
তড়িৎদ্বার ক্যাথোড হলে: H+(1.0M)/H2(1.0 atm),Pt
H+(aq)+e−⇋21H2(g)
25°C তাপমাত্রায় 1.0atm চাপে বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন গ্যাসকে 1.0M HCl এসিডের দ্রবণে অনবরত চালনা করলে প্রমাণ হাইড্রোজেন তড়িৎদ্বার সৃষ্টি হয়। সেহেতু হাইড্রোজেন একটি গ্যাসীয় পদার্থ তাই তড়িৎপ্রবাহের সংযোগের জন্য নিষ্ক্রিয় ধাতু প্লাটিনামের পাত এসিড দ্রবণে রাখা হয়। এ প্লাটিনামের চারপাশ দিয়ে বুদবুদ আকারে হাইড্রোজেন গ্যাস অনবরত চালনা করা হয়।
সুতরাং তড়িৎদ্বারটি হল: Pt,H2(1.0 atm)/H+(1.OM)
এ তড়িৎদ্বারের উপরিতলে নিম্নলিখিত উভমুখী বিক্রিয়া সংঘটিত হয়।
H+(aq)+e⇋21H2(g)
তড়িৎ কোষে ব্যবহৃত কোনো তড়িৎদ্বারের বিভব গণনার সুবিধার্থে মুখ্য নির্দেশক হিসেবে প্রমাণ হাইড্রোজেন তড়িৎদ্বারের সঙ্গে সংযোগ করা হয়। প্রমাণ হাইড্রোজেনের তড়িৎদ্বারের বিভবের মানকে সর্বসম্মতিক্রমে শূন্য ধরা হয়। যেহেতু পূর্ণ তড়িৎকোষের তড়িচ্চালক বল, তড়িৎকোষের ব্যবহৃত দুটি তড়িৎদ্বারের বিভবের সমষ্টির সমান, তাই এক্ষেত্রে তড়িৎকোষের তড়িচ্চালক বলই অজানা তড়িৎদ্বারের বিভবের মান। প্রমাণ হাইড্রেজেনের তড়িৎদ্বারের বিভবের মান শূন্য হলেও তার মানে এই নয় যে, হাইড্রোজেন তড়িৎদ্বারের হাইড্রোজেন ইলেকট্রন ছেড়ে বা গ্রহণের প্রবণতা নেই বা শূন্য। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের ইলেকট্রন ছেড়ে দেয়া বা গ্রহণ করার প্রবণতা আছে। কিন্তু গণনার সুবিধার্থে বিভবের মান শূন্য ধরে অন্যান্য তড়িৎদ্বারের বিভবের মান নির্ণয় করা হয়।
প্রকৃত পক্ষে হাইড্রোজেন তড়িৎদ্বার ব্যবহার করা খুব একটা সুবিধাজনক নয় বিধায় সেকেন্ডারি নির্দেশক তড়িৎদ্বার উদ্ভাবন করা হয়েছে। হাইড্রোজেন তড়িৎদ্বারের সঙ্গে তুলনা করে এই সেকেন্ডারি নির্দেশক তড়িৎদ্বারের বিভব সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়। যে সমস্ত তড়িৎদ্বার সেকেন্ডারি নির্দেশক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে ক্যালোমেল তড়িৎদ্বার উল্লেখযোগ্য। নিচে একটি ক্যালোমেল তড়িৎদ্বার দেখানো হল:
ক্যালোমেল তড়িৎদ্বারের পাশে একটি সরু নলসহ একটি চওড়া কাচের নলে কিছু পরিমাণ পারদ নিয়ে তার উপর কঠিন মারকিউরাস ক্লোরাইড (Hg2Cl2) লবণ বা ক্যালোমেল নেয়া হয়। এরপর চওড়া কাচের নলটি KCl এর সম্পৃক্ত দ্রবণ দ্বারা পূর্ণ করা হয়। বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য প্লাটিনামের একটি সরু তার তরল পারদের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে। পটাশিয়াম ক্লোরাইডের দ্রবণসহ পাশের নলটি তড়িৎ কোষের লবণ সংযোগকারী হিসেবে কাজ করে। এখানে উল্লেখ্য, দুটি ভিন্ন ঘনমাত্রায়, লবণের দ্রবণ এক হলে সংযোগ স্থানে এক ধরনের বিভবের সৃষ্টি হয় যা তড়িৎদ্বার বিভব সঠিকভাবে গণনার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে। এই জটিলতা দূর করার জন্য লবণ সেতু ব্যবহার করা হয়। ক্যালোমেল তড়িৎদ্বারে নিচের বিক্রিয়াটি সংঘটিত হয়।
ক্যালোমেল ইলেকট্রোড (Calomel Electrode):
Hg,Hg2Cl2( s)/Cl (যখন এটি ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়)
Hg2Cl2+2e⇋2Hg(l)+2Cl
কোন তড়িৎ রাসায়নিক কোষের দুটি তড়িৎদ্বারের বিভব পার্থক্যকে ঐ কোষের EMF বলা হয় বা যে বিভব পার্থক্যের কারণে এক তড়িৎদ্বার থেকে অন্য তড়িৎদ্বারে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তাকে কোষটির EMF বলে ।
কোন কোষের EMF বা Ecell = অ্যানোডের জারণ বিভব (Eox) + ক্যাথোডের বিজারণ বিভব (Ered)
= অ্যানোডের জারণ বিভব – ক্যাথোডের জারণ বিভব
= ক্যাথোডের বিজারণ বিভব – অ্যানোডের বিজারণ বিভব
(i) দুটি তড়িৎদ্বারের মধ্যে যে তড়িৎদ্বার সক্রিয়তা সিরিজের উপরে অবস্থান করে, সেটি হবে অ্যানোডে এবং নিচে অবস্থানকারী অপর তড়িৎদ্বারটি হবে ক্যাথোড।
(ii) দুটি তড়িৎদ্বারের জারণ বিভবের মান দেয়া থাকলে যে তড়িৎদ্বারের জারণ বিভবের মান বেশি হবে, সেটি হবে অ্যানোডে। অপরটি হবে ক্যাথোড। একইভাবে দুটি তড়িৎদ্বারের বিজারণ বিভবের মান দেয়া থাকলে যে তড়িৎদ্বারের বিজারণ বিভবের মান বেশি হবে সেটি হবে ক্যাথোড। অপরটি হবে অ্যানোড।
কোন কোষের EMF এর মান ধণাত্মক হলে, ঐ কোষের বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত হবে। অর্থাৎ কোষটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে। কিন্তু, EMF এর মান ঋণাত্মক হলে কোষ বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত হবে না অর্থাৎ কোষটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে না।
দেওয়া আছে,
EB/B20=−0.8 VEA/A2∘=+0.44 V
প্রদত্ত জারণ বিভবের মান হতে দেখা যায় যে, B তড়িৎদ্বারটি হবে ক্যাথোড এবং A তড়িৎদ্বারটি হবে অ্যানোড।
কারণ A তড়িৎদ্বারের জারণ বিভবের মান B তড়িৎদ্বার অপেক্ষা বেশি।
দুটি তড়িৎদ্বারের সমন্বয়ে গঠিত কোষ হবে নিম্নরূপ-
A(s)∣∣A2+(aq)∣∣B2+(aq)∣B(s) বা, A(s)∣∣A2+(aq)∣∣∣∣B2+(aq)∣∣B(s)
অ্যানোড: A→A2++2e−
ক্যাথোড: B2++2e−→B
বিক্রিয়া : A+B2+→B+A2+ (মোট বিক্রিয়া)
কোষটির EMF বা Ecell =A তড়িৎদ্বারের জারণ বিভব – B তড়িৎদ্বারের জারণ বিভব
=EA/A2+o−EB2+/Bo=+0.44+0.8=+1.24
যেহেতু EMF এর মান ধণাত্মক তাই কোষ বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত ঘটবে।
B∣∣B2+∣∣A2+∣A
কোষটির EMF বা Ecell=B তড়িৎদ্বার জারণ বিভব – A তড়িৎদ্বারের জারণ বিভব
=EB2+/Bo−EA/A2+o=−0.8−0.44=−1.24
EMF negative, তাই স্বত:স্ফূর্ত হবে না।
দেওয়া আছে,
EB/B2∘=+0.76 VEC/C2+0=−0.34 V B+CSO4→BSO4+C
বিক্রিয়াটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে হবে কিনা? তা যাচাই কর।
এ বিক্রিয়াটি নিম্নরূপে প্রকাশ করা যায়:
B+C2+→B2++C
এ বিক্রিয়াটি যে কোষে সংঘঠিত হয় তাকে নিম্নরূপে প্রকাশ করা যায়।
B∣∣B2+∣∣C2+∣C
অ্যানোড: B→B2++2e−
ক্যাথোড: C2++2e→C
∴ এ কোষে EMF = EB/B2+−EC/C2+
=0.76+0.34
=1.1V
যেহেতু EMF এর মান ধণাত্মক তাই কোষ বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ বিক্রিয়াটি স্বত:স্ফূর্তভাবে সংঘটিত হবে।
২য় পদ্ধতি (2nd method): প্রদত্ত জারণ বিভবের মান হতে দেখা যায়, B তড়িৎদ্বারের জারণ বিভবের মান C তড়িৎদ্বার অপেক্ষা বেশি হবে। তাই, C অপেক্ষা B শক্তিশালী বিজারক হবে। এ কারণে B মৌল C2+ আয়নকে বিজারিত করতে পারে। অর্থাৎ বিক্রিয়াটি স্বতঃস্ফূর্ত সংঘটিত হবে।
দেয়া আছে,
EZn2+/Zn0=−0.76 VEPd2+/∘Pd=−0.126 V
উভয় দ্রবণের ঘনমাত্রা একই হলে, Pd ধাতু দ্বারা Zn2+ কে বিজারিত করা যাবে কী? (If the concentration of both solution is same, will Zn2+ be reduced by Pd metal?)
১ম পদ্ধতি (1st method):
যদি Pd ধাতু দ্বারা Zn2+ বিজারিত হয় তাহলে নিম্নোক্ত বিক্রিয়া সংঘটিত হবে।
Pd+Zn2+→Pd2++Zn
এ বিক্রিয়াটি যে কোষে সংঘটিত হয়, তাকে নিম্নরূপে প্রকাশ করা যায়-
Pd∣∣Pd2+∣∣Zn2+∣Zn
এ কোষের EMF বা Ecell =EZn2+/Zn−EPd2+/Pd
=0.76+0.126 = − 0.634V
যেহেতু, কোষের EMF এর মান ঋণাত্মক তাই বিক্রিয়াটি স্বতঃস্ফূর্ত হবে না। অর্থাৎ Pd ধাতু Zn2+ কে বিজারিত করতে পারে না ।
২য় পদ্ধতি (2nd method):
সক্রিয়তা সিরিজে Pd অপেক্ষা Zn উপরের অবস্থান করে। তাই Zn অধিক শক্তিশালী বিজারক এক্ষেত্রে Zn, Pd2+ কে বিজারিত করতে পারলেওPd, Zn2+ কে বিজারিত করতে পারে না।
দেওয়া আছে,
EZn∘Zn2=+0.76 V এবং, EFe/Fe2+∘=+0.44 V
Zn এর পাত্রে FeSO4 দ্রবণ রাখা হলে, যদি বিক্রিয়া সংঘটিত হয় তবে একে নিমরূপে প্রকাশ করা যায়-
Zn+FeSO4→ZnSO4+FeZn+Fe2+→Zn2++Fe
এ বিক্রিয়াটি যে কোষে সংঘটিত হয় তা হলে,
Zn∣∣Zn2+∣∣Fe2+∣Fe
এ কোষের EMF বা Ecell=E∘nn/Zn2+−EFe/Fe2+∘
= 0.76 − 0.44 = 0.32
যেহেতু, EMF এর মান ধণাত্মক। তাই কোষ বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত হবে। এ কারণে Zn এর পাত্রে FeSO4 দ্রবণ রাখা যাবে না । অর্থাৎ Zn, Fe2+ কে বিজারিত করতে পারে বলেই বিক্রিয়াটি স্বতঃস্ফূর্ত হবে। কারণ সক্রিয়তা সিরিজে Zn, Fe এর উপরে অবস্থান করে।
CuSO4(aq)+Ag(s)→ বিক্রিয়া ঘটে না
2AgNO3(aq)+Cu(s)→Cu(NO3)2(aq)+2Ag↓
অর্থাৎ কপার AgNO3 দ্রবণ থেকে Ag কে প্রতিস্থাপন করে।
সুতরাং সক্রিয়তার ক্রম হল- Cu>Ag
(ii) তুঁতের দ্রবণে Fe চূর্ণ যোগ করলে Cu এর লাল অধঃপড়ে।
CuSO4(aq)+Fe→FeSO4(aq)+Cu(s)∴Fe>Cu
(iii) FeSO4 দ্রবণে Zn চূর্ণ যোগ করলে Fe এর কালো অধঃক্ষেপ পড়ে।
FeSO4(aq)+Zn(s)→ZnSO4(aq)+Fe(s)
সুতরাং ৪টি পরীক্ষার সামগ্রিক সিদ্ধান্ত হল সক্রিয়তা সিরিজে ধাতুসমূহের সক্রিয়তার উচ্চ ক্ৰম সক্রিয়তা:
Ag<Cu<Fe<Zn<Mg<Na<Ca<K<Li
কোন কোষের EMF এর মান তড়িৎদ্বারের প্রকৃতি, তাপমাত্রা এবং ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে। যদি কোন তড়িৎ রাসায়নিক কোষের দুটি তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ঘনমাত্রা ভিন্ন হয় তাহলে নার্নষ্ট সমীকরণ ব্যবহার করে ঐ কোষের EMF মান নির্ণয় করা যায়। সমীকরণ নিম্নরূপে প্রতিষ্ঠা করা যায়-
তড়িৎ রাসায়নিক কোষে বিক্রিয়ার ফলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ সংঘটিত হয় তখন কোষটি বৈদ্যুতিক কাজ সম্পন্ন করে। মনে করি, কোনো কোষের তড়িৎচ্চালক বল E এবং কোষের রিডক্স বিক্রিয়ায় n সংখ্যক ইলেকট্রন প্রয়োজন হয়। ফলে পরিবাহীতে n ফ্যারাডে (nF) তড়িৎ প্রবাহিত হয়। সুতরাং
তড়িৎ প্রবাহ জনিত মোট কাজের পরিমাণ =nF কুলম্ব ×E ভোল্ট = nFE জুল
তাপগতিবিদ্যার নিয়ম অনুযায়ী,
তড়িৎ কোষে বিক্রিয়ার ফলে যে মুক্তশক্তির হ্রাস ঘটে, তা তড়িৎ প্রবাহ জনিত কাজের সমান,
অর্থাৎ −ΔG=nFE
[ΔG এর মান ঋণাত্মক হলে কোষ বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত হবে কিন্তু EMF ধণাত্মক হলে কোষ বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত হবে, ΔG=0 এবং Emf=0 হলে কোষ বিক্রিয়া সাম্যাবস্থায় থাকে]
গিবস এর সমীকরণ মতে,
ΔG=ΔG∘+RTlnk−nFE=−nFE0+RTInkE=E0−nFRTlnkE=E0−nF2.303RTlog[ বিক্রিয়ক আয়ন] [ উৎপাদ আয়ন]
এ সমীকরণকে নার্নষ্ট সমীকরণ বলে। যার সাহায্যে কোন কোষের EMF মান নির্নয় করা যায়।
যদি, T=25°C বা 298K হয়
R=8.314JK−1 mol−1n=2 হয়। F=96500C
তাহলে, উপরোক্ত সমীকরণটিকে নিম্নরূপে লেখা যায়-
E=E0−20.0592log[বিক্রিয়ক আয়ন] [উৎপাদ আয়ন] বা, Ecell =Ecell 0−20.0592logK এখানে K হল সাম্যধ্রুবক।
পাতলা দ্রবণের জন্য নার্নস্ট সমীকরণে সরাসরি আয়নের ঘনমাত্রা ব্যবহার করা যায় । কিন্তু ঘন দ্রবণের ক্ষেত্রে Activity co-cfficient এর মান 1 এর সমান হয় না বলে সেক্ষেত্রে সরাসরি ঘনমাত্রা ব্যবহার করে কোষ বিভব পরিমাপ করা যায় না। অন্যদিকে, ঘন দ্রবণের ক্ষেত্রে বিপরীত চার্জের আয়নসমূহের মধ্যে দুর্বল আকর্ষণ বল কাজ করে। তাই জারণ ও বিজারণে অংশ নেয়া মুক্ত আয়নের পরিমাণও কমে যায়। তাই বেশি ঘনমাত্রার (10−3M এর বেশি) দ্রবণের কোষ বিভব সম্পর্কে নার্নস্ট সমীকরণ সঠিক ধারণা দিতে পারে না। অর্থাৎ নার্নস্ট সমীকরণ মূলত পাতলা দ্রবণের জন্যই প্রযোজ্য।
Mg∣∣Mg2+(0.13M)∣∣Ag+(1×10−4M)∣AgE∘Mg/Mg2+=+2.34V,E∘Ag/Ag2+=−0.8V
উপরোক্ত তড়িৎ কোষ সংঘটিত বিক্রিয়া নিম্নরূপ :
Mg→Mg2++2e−Mg+2Ag+→2eMg2++2Ag[Ag++e−→Ag]×2
যেহেতু, এখানে 2mole− আদান প্রদান হয়েছে এবং তাপমাত্রা 25°C তাই নার্নষ্ট সমীকরণটিকে নিম্নরূপে লেখা যায়-
E=E0−20.0592log[Ag2+]2[Mg2+]=[E0Mg/Mg2+−E0Ag/Ag2+]−20.0592log(1×10−4)20.13=(2.34+0.8)−20.0592log(1×10−4)20.13=+2.96 V
তড়িৎ রাসায়নিক সারি(Electrochemical Series)
তড়িৎদ্বার | অর্ধকোষ বিক্রিয়া | প্রমাণ বিজারণ বিভব E0 (V) |
Li+/Li(s)K+/K(s)Ca2+/Ca(s)Na+/Na(s)Mg2+/Mg(s)Al3+/Al(s)Zn2+/Zn(s)Fe2/Fe(s)Sn2+/Su(s)Pb2+/Pb(s)H+/H2( g),PtCl−/AgCl(s),AgCl−/Hg2Cl2( s),HgCu2+/Cu(s)+0.28+0.34Ag+/Ag(s)Br−/Br2,PtCl−/Cl2,PtAu3+/Au | Li++e→Li(s)K++e→K(s)Ca2++2e→Ca(s)Na4+e→Na(s)Mg2++2e→Mg(s)Al3++3e→Al(s)Zn2++2e→Zn(s)Fe2++2e→Fe(s)Sn2++2e→Su(s)Pb2++2e→Pb(s)H++e→21H2( g)AgCl+e−→Ag+Cl−Hg2Cl2+2e−→2Hg+2Cl−Cu2++2e−→Cu(s)I2+2e→2I−(aq)Hg2++2e−→Hg(I)Ag+e→Ag(s)Br2+2e→2Br−(aq)Cl2+2e→2Cl−(aq)Au3++3e→Au | −3.05−2.93−2.87−2.71−2.37−1.66−0.76−0.44−0.14−0.130.00+0.22+0.54+0.79+0.80+1.08+1.36+1.50 |
এক প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট তড়িৎ রাসায়নিক কোষের উদাহরণ হল, তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ যা সাধারণত ধাতু নিষ্কাশনে এবং তড়িৎ বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।
দুই প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট তড়িৎ রাসায়নিক কোষ হল:
গ্যালভানিক কোষ এ ধরনের কোষ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
যে রাসায়নিক কোষে একটি মাত্র তরল ব্যবহৃত হয় তাকে তরল কোষ বলে। যেমন- লেকল্যান্স কোষ এবং যে কোষে দুটি তরল ব্যবহৃত হয় তাকে দুই তরল কোষ বলে। যেমন- গ্যালভানিক কোষ। তবে শুষ্ক কোষে কোনো তরল পদার্থ ব্যবহৃত হয় না।
ধাতু ক্ষয়ের অন্যতম উদাহরণ হল লোহার মরিচা পড়া। সাধারণত অবিশুদ্ধ লোহায় দ্রুত মরিচা পড়ে। এক্ষেত্রে অবিশুদ্ধ লোহার আয়রন অ্যানোড হিসেবে কাজ করে এবং ভেজালগুলো ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে। যা নিষ্ক্রিয় তড়িৎদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আয়রন নিম্নরূপে আর্দ্র Fe2O3 গঠন করে। যা মরিচা হিসেবে পরিচিত। তাই বলা যায়, ধাতুর ক্ষয় একটি অ্যানোডিক জারণ প্রক্রিয়া।
অ্যানোড (Anode) : Fe→Fe2++2e−
ক্যাথোড (Cathode) : H2O+21O2+2e−→2OH−Fe2++2OH−→Fe(OH)2Fe(OH)2+21O2+H2O→Fe2O3⋅3H2O
Read more